অর্থনীতি

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ: বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট!

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। হরমুজ প্রণালী, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ রুট, সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ তেল, সার এবং গ্যাস সরবরাহ করা হয়।



ইরান এর আগে হুমকি দিয়েছে যে তারা যদি অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন হয়, তবে এই জলপথ বন্ধ করে দেবে। ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণ করছে, যার মধ্যে শাহরান তেল ডিপো অন্যতম। এই ডিপোতে ইরানের প্রধান জ্বালানি মজুদ রয়েছে, যা আনুমানিক ৩ দিনের জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও শাহর এবং ইস্পাহানের কাছে নাজাফাবাদ তেল শোধনাগারের মতো বড় পরিশোধন কেন্দ্রগুলোতেও হামলা চালানো হয়েছে।




সংঘাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হলো দক্ষিণ পার্স ক্ষেত্র, যা কাতারের সাথে ইরানের বৃহত্তম অফশোর গ্যাস রিজার্ভ। ইরান ইসরায়েলের হাইফা শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার ফলে মিশরের মাধ্যমে গ্যাস রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ সীমিত হয়ে গেছে। হাইফা তেল শোধনাগারের পাইপলাইন এবং ট্রান্সমিশন লাইনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে এটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।


নিরাপত্তার কারণে ইসরায়েল ভূমধ্যসাগরের তামার ও লেভিয়ান গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও জাপান মধ্যপ্রাচ্যের তেলের উপর নির্ভরশীল এবং বর্তমান সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান, যাদের রফতানি বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ৪.৫%।

যদি শিপিং রুটে কোনো বাধা আসে, তবে শুধু তেল নয়, অন্যান্য পণ্যের সরবরাহও সীমিত হয়ে যেতে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে ট্যাঙ্কার চলাচলের খরচ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে এবং যেকোনো ধরনের বিঘ্ন তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের উপরে নিয়ে যেতে পারে।


ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধ, চীনে ধীরগতি এবং ইউরোপের রাশিয়ার তেল ও গ্যাস থেকে সরে যাওয়া সবকিছুই বিশ্ব বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।