বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হলো ভাত। প্রতিদিনকার পাতে ভাত না থাকলে যেন খাবারই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে অনেকেই জানেন না, এই ভাত রান্নার সময় তৈরি হওয়া মাড়, অর্থাৎ চাল সিদ্ধ হওয়ার পর যে পানিটা ফেলা হয়, সেটাই হতে পারে দারুণ পুষ্টিগুণে ভরপুর এক প্রাকৃতিক ঔষধ।
ভাতের মাড়ে থাকে ভিটামিন ই, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরের নানা প্রয়োজনে কার্যকর। অথচ রান্নাঘরের ড্রেনে আমরা এই মূল্যবান তরলটি প্রতিদিনই ফেলে দেই। অথচ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে এটি আমাদের ত্বক, চুল এবং এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্যও বেশ উপকারী।
চুলের পরিচর্যায় মাড়
যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ভাতের মাড় হতে পারে একটি সহজ সমাধান। গোসলের আগে এটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে চুলের গোঁড়ায় পুষ্টি পৌঁছায়। ফলে চুলের ভঙ্গুরতা কমে, মাথার ত্বকের সংক্রমণও হ্রাস পায় এবং চুল হয় আরও মসৃণ ও উজ্জ্বল।
ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক টোনার
মাড় ব্যবহার করলে ত্বকও পায় প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তুলোতে ভাতের মাড় নিয়ে মুখে লাগিয়ে ম্যাসেজ করলে ত্বকের মৃত কোষ উঠে যায়, রোমছিদ্র ছোট হয় এবং ত্বক হয় মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এটি নিয়মিত করলে ত্বকের বার্ধক্য রোধও করা সম্ভব।
ব্রণ কমাতে সহায়ক
ভাতের মাড়ে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা ত্বকে থাকা প্রদাহ হ্রাস করে। ফলে যারা নিয়মিত ব্রণের সমস্যায় ভোগেন, তারা দিনে দুইবার ভাতের মাড় ব্যবহার করলে উপকার পেতে পারেন। এটি ত্বকের গভীরে পৌঁছে ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
ডায়ারিয়া প্রতিরোধে কার্যকর
ডায়ারিয়ার মতো সমস্যায়ও ভাতের মাড় কার্যকর হতে পারে। পাতলা পায়খানা ও পেটব্যথার সময় এক গ্লাস মাড়ের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে শরীরে খনিজের ঘাটতি পূরণ হয় এবং দ্রুত আরাম মেলে। এটি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
শরীরচর্চার আগে বা ক্লান্তির সময়ে এক গ্লাস ভাতের মাড় শরীরে শক্তির জোগান দিতে পারে। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরের পেশি গঠনে সহায়ক এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসেবেও কাজ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
নিয়মিত দিনে ১–২ গ্লাস ভাতের মাড় পান করলে অন্ত্রের চলাচল স্বাভাবিক হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে ডাইজেস্টিভ সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্যও এটি একটি প্রাকৃতিক সমাধান।