পৃথিবীর সবচেয়ে আবেগঘন এবং মর্মস্পর্শী শব্দগুলোর একটি হলো ‘বাবা’। এই শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্নেহ, নির্ভরতা এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ছায়া। সেই সব বাবাদের প্রতি সম্মান জানাতেই প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। চলতি বছর দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে আজ, রোববার।
যদিও বাবা দিবস পালনের ধারণা এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে এই দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।
বাবা দিবস পালনের ইতিহাস বেশ পুরনো। ধারণা করা হয়, বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই এই দিবসের সূচনা ঘটে। মূল উদ্দেশ্য ছিল মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও সন্তানের জীবনে সমান অবদান রাখেন — এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়া।
ইতিহাস বলছে, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্ট শহরের একটি গির্জায় প্রথমবারের মতো বাবা দিবস পালন করা হয়। এরপর, ১৯০৯ সালে একই রকম উদ্যোগ নেওয়া হয় অন্য একটি শহরে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগটি আসে ১৯১০ সালে, যখন ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯ জুন দিনটিকে বাবা দিবস হিসেবে উদ্যাপন করেন।
বাবার গুরুত্ব ও ভালোবাসার মূল্যায়ন ধীরে ধীরে সমাজে প্রতিফলিত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১৩ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে বাবা দিবসকে সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণার জন্য একটি বিল পেশ করা হয়।
১৯২৪ সালে সেই উদ্যোগে সমর্থন দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাবা দিবস’কে রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন, ১৯৬৬ সালে।
প্রথমদিকে বাবা দিবসের প্রতি আগ্রহ ততটা প্রবল ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং এখন উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়।
এ দিনে সন্তানেরা বিভিন্নভাবে তাদের বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকেন— উপহার, শুভেচ্ছা বার্তা, কিংবা সময় কাটিয়ে। তবে উপহারের চেয়েও বড় যে জিনিসটি একজন বাবা চান, তা হলো তার সন্তানের ভালোবাসা ও সম্মান।
এই বিশেষ দিনে আমাদের সকলের উচিত, জীবনের ছায়া হয়ে থাকা সেই মানুষটিকে জানানো— আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি। কারণ, একজন বাবার অবদান কখনোই শব্দে পরিমাপ করা যায় না, তবে ভালোবাসায় প্রকাশ করা সম্ভব।