জাতীয়

জাতীয় শিশু দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য

জাতীয় শিশু দিবস বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার, মঙ্গল ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রতি জাতিগত অঙ্গীকারের প্রতীক। এই দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ এটি শিশুদের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের প্রতি জাতির ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে।

বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস পালনের শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তখনকার সরকার ১৭ মার্চকে, অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে, জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে এই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি নিয়মিতভাবে উদযাপন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে এটি সাধারণ ছুটির দিন হিসেবেও গণ্য হয়।

তবে ২০০১ সালের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এই দিবসটির উদযাপন কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন সরকার দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ছুটি বাতিল করে দেয়। ফলে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয়ভাবে এই দিবস উদযাপিত হয়নি। পরে ২০০৯ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে জাতীয় শিশু দিবস আবারও পূর্ণভাবে উদযাপন শুরু হয় এবং এটি নতুন করে গুরুত্ব পায়।

জাতীয় শিশু দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের কল্যাণ, সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ দিনে শিশুদের সৃজনশীলতা ও কল্পনার বিকাশ ঘটাতে নানা সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম আয়োজিত হয়। শিশুদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতা, গান, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, আলোচনা সভা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।

শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভালোবাসা ছিল গভীর ও আন্তরিক। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্র নির্মাতা। তাই শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি সবসময় গুরুত্ব দিতেন। জাতীয় শিশু দিবস সেই মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিকেই সামনে এনে জাতিকে অনুপ্রাণিত করে।

এই দিবসটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি—শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করব। শিশুদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও দায়িত্ববোধ যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছায়—এটাই জাতীয় শিশু দিবসের প্রধান বার্তা।