২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইতিহাস গড়েছেন ভারতের চেন্নাইয়ের তরুণ দাবাড়ু গুকেশ ডোমাররাজু। তিনি সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। প্রার্থীদের টুর্নামেন্টে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারদের হারিয়ে, যাদের মধ্যে ছিলেন ফাবিয়ানো কারুয়ানা, হিকারু নাকামুরা, ইয়ান নেপোমনিয়াচ্চি ও আলিরেজা ফিরৌজা, গুকেশ শেষ পর্যন্ত চীনের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেন।
তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট সহজে বসেনি গুকেশের মাথায়। কারণ, যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সেরা দাবাড়ু হিসেবে স্বীকৃত হন, তবে নরওয়েজীয় কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেনের প্রভাব তার কৃতিত্বের ওপর ছায়া ফেলেছিল। ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত কার্লসেন ২০২৩ সালে অপরাজিত থেকেই স্বেচ্ছায় বিশ্ব শিরোপা ছেড়ে দেন। গুকেশ তার বিরুদ্ধে কখনোই ক্লাসিকাল ফরম্যাটে জিততে পারেননি।
গুকেশ নিজেও সে সময় এই সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানেই আমি সেরা খেলোয়াড় — তা নয়। নিঃসন্দেহে সেটা ম্যাগনাস। এটা আমাকে আরও পরিশ্রম করতে উৎসাহ জোগাবে, যাতে একদিন তার মতো মহান হওয়া সম্ভব হয়।”
প্রায় ছয় মাস পর, ২০২৫ সালের ১ জুন, নরওয়ে চেস টুর্নামেন্টে সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত আসে। গুকেশ প্রথমবারের মতো ক্লাসিকাল দাবায় কার্লসেনকে পরাজিত করেন। এটি শুধু তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় জয় ছিল না, বরং তার আত্মবিশ্বাসের জোরদার ভিত্তি গড়ে দেয় এবং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেয়। অনেকেই মনে করেছিলেন, গুকেশ হয়তো চ্যাম্পিয়ন হলেও মানসিকভাবে কার্লসেনের ছায়ায় আবদ্ধ, কিন্তু এই জয় সেই ধারণা ভেঙে দেয়।
এই প্রতিযোগিতায় তাদের মুখোমুখি হওয়াটাই ছিল বিশেষ আকর্ষণ। কারণ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গুকেশ ও কার্লসেন এটিই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। শুধু দাবা নয়, পুরো ক্রীড়া জগতেই এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার কমতি ছিল না। সেই উত্তেজনার আবহেই গুকেশ প্রমাণ করলেন, তিনি কেবল মুকুটধারীই নন — শ্রেষ্ঠত্বের পথে এক দৃঢ় পদক্ষেপও নিয়েছেন।
এই জয়ে গুকেশ দেখালেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমার পাশাপাশি তিনি নিজের অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত। আর হয়তো এই শুরু, সেই যাত্রার — যেখানে গুকেশ ও কার্লসেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী দিনে বিশ্ব দাবার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।