খেলাধুলা

৯ বছর বয়সে ইতিহাস: লুকা প্রোটোপোপেস্কুর নতুন বিশ্বরেকর্ড

মাত্র কয়েকদিন আগে নবম জন্মদিন পালন করার পরই ফ্রান্সের সিএম লুকা প্রোটোপোপেস্কু দাবার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন। মার্সেই শহরের এই বিস্ময়বালক হয়ে উঠেছেন সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, যিনি আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা ফিদে-র ক্লাসিক্যাল রেটিংয়ে ২২০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছেন। এই অসাধারণ কীর্তি তিনি অর্জন করেছেন নিজের সাবেক কোচকে পরাজিত করে।

মাত্র নয় মাস আগে ইংল্যান্ডের এফএম ইথান প্যাং আর্জেন্টিনার আইএম ফাওস্তিনো অরোর রেকর্ড মাত্র সাত দিন পার করে ভেঙেছিলেন। এবার একই রেকর্ড আরও একবার ভাঙলেন লুকা, এবং সেটাও মাত্র এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বার।

প্রোটোপোপেস্কু যখন এই রেটিং অর্জন করেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর ৫ দিন। এটি ইথান প্যাংয়ের তুলনায় ৯৮ দিন আগে এবং ফাওস্তিনো অরোর তুলনায় ১০৫ দিন আগে। এপ্রিল মাসের তালিকা অনুযায়ী, এখন তিনিই শীর্ষে, তার নিচে রয়েছে প্যাং এবং অরো।

দাবায় ২২০০ রেটিং অর্জন করা মানে “মাস্টার স্তর” স্পর্শ করা, যা যেকোনো বয়সের দাবাড়ুর জন্যই বিরল সম্মান। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে এই উচ্চতায় পৌঁছানো সত্যিই বিরল ঘটনা। ফিদে-র তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরের নিচে বিশ্বজুড়ে রেটিংপ্রাপ্ত ২,৪৪৩ খেলোয়াড়ের মধ্যে লুকা এখন ১ নম্বরে, ফ্রান্সের ১৫,৭০৪ সক্রিয় খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩২৮তম, এবং বিশ্বের ১,৯৭,৩০০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৭,১৮৫ নম্বরে।

এই রেটিংয়ে লাফ দিয়ে পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত দুটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় তার অসাধারণ পারফরম্যান্স। মাত্র দুই মাসে তিনি ৩২১ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেছেন—১৮৯৫ থেকে বেড়ে ২২১৬।

গত মাসে তিনি কান ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টের ‘বি’ বিভাগে ৯ ম্যাচে ৭.৫ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। তার পারফরম্যান্স ছিল ২২৭৬ রেটিং লেভেলে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৮১ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি ছিলেন ৫৪ নম্বর সিড এবং সম্ভবত বয়সে সবচেয়ে কম।

যদিও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি এখন কেবলমাত্র পরিচিত হতে শুরু করেছেন, ফ্রান্সে ইতোমধ্যে তিনি খবরের শিরোনামে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম “লে প্রোভঁস”-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে লুকার মা আন্দ্রেয়া জানান, তার ছেলে প্রথম দাবার নিয়ম শেখে কোভিড মহামারির সময়, মাত্র চার বছর বয়সে।

“সে তার বাবাকে খেলতে দেখত, কিন্তু নিজে খেলার অনুরোধ করত না। এক সময় সে খেলতে শুরু করল এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে হারিয়ে দিল। তখন আমরা বুঝলাম তাকে ক্লাবে নিয়ে যেতে হবে যেন তার প্রকৃত মান যাচাই করা যায়,” বলেন আন্দ্রেয়া।

লুকা সেই প্রতিভাবান শিশুদের অন্যতম, যারা মহামারির সময় দাবার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে। এদের মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের ডব্লিউএফএম বোধানা শিবানান্দান, সিঙ্গাপুরের সিএম অশ্বথ কৌশিক এবং রাশিয়ার এফএম রোমান শোগঝিয়েভ। এদের প্রত্যেকেই মহামারির সময় দাবা শেখে এবং একের পর এক রেকর্ড গড়ে।

লুকার এই অর্জন প্রমাণ করে, সময়মতো পরিচর্যা পেলে ছোটরাও বিশ্বমঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে। এখন সবার চোখ তার পরবর্তী লক্ষ্য ও ভবিষ্যতের সাফল্যের দিকে।