">
৩২. ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অবশ্যই এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ [সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২ (পঞ্চম পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতের মূলকথা হলো, ইসলামের নির্দেশনা মতে, কোনো ব্যক্তি শুধু ব্যভিচার থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না, বরং এ পথে ধাবিতকারী বিষয় থেকেও দূরে থাকবে। ব্যভিচারের সমগোত্রীয় অথচ তার চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ। ইসলামে ব্যভিচারের পাশাপাশি ধর্ষণও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিতা। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। শুধু জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সংঘটিত হয়। এক. ব্যভিচার। দুই. বল প্রয়োগ। তিন. সম্ভ্রম লুণ্ঠন। ব্যভিচারের জন্য কোরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তবে ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতে, ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি ‘মুহারাবা’র শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। ‘মুহারাবা’ হলো অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা কিংবা লুণ্ঠন করা। এককথায়, ‘মুহারাবা’ হলো পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন, নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ, ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ‘মুহারাবা’র শাস্তি এভাবে নির্ধারণ করেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে : তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)
এ আয়াতের আলোকে মালেকি মাজহাবে ধর্ষণের শাস্তিতে ‘মুহারাবা’র শাস্তি যুক্ত করার মত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে, সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূল করার লক্ষ্যে এ শাস্তি প্রয়োগ করা জরুরি। অন্যদিকে ধর্ষণকারী অন্যের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করে এবং অন্যায়ভাবে অন্যের সংবেদনশীল অঙ্গ থেকে উপকৃত হয়। তাই ধর্ষিত নারীকে তাঁর সমকক্ষ বা সমগোত্রীয় নারীদের অনুরূপ মোহরানা দিতে হবে। এটি হানাফি মাজহাব ছাড়া বাকি তিন মাজহাবের সিদ্ধান্ত। (আল মুগনি : ৮/৯৮)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ নারীর সঙ্গে শয্যাযাপন করে, তাহলে নারীর লজ্জাস্থান উপভোগ করার কারণে মোহরানা দেওয়া জরুরি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০২)
সব শেষে একটি বিষয় স্মরণ রাখা জরুরি। বিষয়টি হলো, ইসলাম মনে করে, সমাজ থেকে ব্যভিচার ও ধর্ষণ সমূলে নির্মূল শুধু দণ্ডবিধি ও আইনের কঠোরতার মাধ্যমে সম্ভব না-ও হতে পারে। দণ্ডবিধি ব্যভিচার ও ধর্ষণ উপশমের একটি উপায়। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি ও আত্মশক্তির জাগরণ। প্রয়োজন তাকওয়ার চেতনা। সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহর ভয় সর্বদা যাকে তাড়িত করে, পরকালের জবাবদিহির ভয় যার মনে সদা জাগ্রত, ব্যভিচার ও ধর্ষণ তার পক্ষে কঠিন, অসম্ভবও বটে।
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ
About Us Contact Privacy & Policy DMCA Sitemap
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সেরা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম -২০১৮